মানুষের মায়ের বুক খালি করে সরকারে টিকে থাকা যায় না: এরশাদ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ‘মানুষ হত্যা, মানুষ গুম ও মানুষের মায়ের বুক খালি করে সরকারে টিকে থাকা যায় না। সরকারে থাকতে হলে মানুষের ভালবাসা প্রয়োজন। তাদের ভালবাসার মাধ্যমেই ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। সরকারের দৃষ্টি এখন মানুষের দিকে নয়। ক্ষমতায় কীভাবে টিকে থাকা যায় সেদিকে সরকারের লক্ষ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
তিনি বুধবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কালিকচ্চ ঈদগাহ মাঠে জেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত তৃণমূল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধার সভপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, বন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক মাহমুদ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির প্রসিডিয়াম সদস্য সুনিল শুল রায়, সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, চেয়ারম্যান এরশাদের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, উপদেষ্টা কাজী মামুনুর রশিদ ও নাসিরনগর উপনির্বাচনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী রেজোওয়ান আহমেদ প্রমুখ।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, খাদ্য মজুদ আছে শুধু মুখে বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার চিত্র উল্টো। মাঠে গ্রামে গঞ্জে গিয়ে এর প্রমাণ মেলে না। চালের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের এখন নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে।
নাসিরনগর নির্বাচন বিষয়ে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের কোন আস্থা নেই। তবে নাসিরনগর নির্বাচনেই প্রমাণ হবে নির্বাচন কমিশন কতটা নিরপেক্ষ। আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার গঠন করবে।
আমাদের মন্ত্রীরা শিগগিরই পদত্যাগ করবেন: এরশাদ
জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা খুব শিগগিরই পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
শুক্রবার সকালে রংপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় আমিসহ জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী আছেন। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভা থেকে একযোগে পদত্যাগ করবো। এ ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছি। পদত্যাগ করার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় আমাদের দলের লোক থাকায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে এবং এটা বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সংসদে বলেছেনও। সুতরাং আমি বলব, আমাদের কাউকেই মন্ত্রিসভায় নেওয়া ঠিক হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক সমালোচিত হয়েছি। তবে সরকারি দলের সঙ্গে মন্ত্রিসভায় যোগদান করার বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক কৌশল। জার্মানিসহ অনেক দেশে এ নজির আছে। তবে আমরা আর মন্ত্রিসভায় থাকতে চাই না।
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট করার কোনই সম্ভাবনা নেই জানিয়ে এরশাদ বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে কিনা সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তারপরও সরকার চেষ্টা করছে। আমরাও মনে করি তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। তবে বিএনপি এখন নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাদের দলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনও নেতা নেই। কে নেতৃত্ব দেবে কার নেতৃত্বে নির্বাচন হবে এসব সমস্যা আছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এরশাদ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তো নির্বাচন বন্ধ হবে না। তাদের না যাওয়ায় কিছুই যায় আসে না। জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে যায়, বিএনপি না গেলেও সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।
খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ৬ বছর ২ মাস কারাগারে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে সব মামলাই ছিল জামিনযোগ্য। তার পরেও আমি জামিন পাইনি। হাইকোর্ট আদেশ দেওয়ার পরেও আমাকে সংসদে আসতে দেওয়া হয়নি। পৃথিবীর কোনও দেশে কোনও নেতাই আমার মতো নির্যাতন ভোগ করেনি। আমার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার কোনও নজির নেই।
এরশাদ বলেন, আমরা আগামী ২৪ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছি। আশা করছি সেখানে পাঁচ লাখ মানুষের সমাবেশ হবে। আমরা দেখাতে চাই জাতীয় পার্টি কতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে। আগামীতে আমরা জনগণের রায় নিয়ে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে চাই। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশের মানুষকে দেখানো আমরা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাকিটা সমাবেশেই বলবো।
এর আগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর সরাসরি রংপুর সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছালে দলের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় দলের মহাসবিচ রুহুল আমিন হাওলাদার, কোচেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহাম্মেদ বাবলু, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন।
Comments
Post a Comment